۸٬۱۴۴
ویرایش
Mohsenmadani (بحث | مشارکتها) بدون خلاصۀ ویرایش |
Mohsenmadani (بحث | مشارکتها) بدون خلاصۀ ویرایش |
||
خط ۱۲۷: | خط ۱۲۷: | ||
}} | }} | ||
</pre> | </pre> | ||
'''ওযু;''' মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে বিশেষ পদ্ধতিতে মুখমণ্ডল ও হাতদ্বয়কে ধৌত করা এবং মাথা ও পাদ্বয় মাসাহ করাকে বোঝায়। নামায আদায়ের জন্য ওযু করা ওয়াজিব। একইভাবে পবিত্র কুরআনের লেখা ও মহান আল্লাহর নাম ওযু ব্যতীত স্পর্শ করা জায়েয নয়। | |||
ওযুর সংজ্ঞা | |||
ওযুর আভিধানিক অর্থ হলো; ‘পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা’; এ কারণে আরবরা পরিচ্ছন্ন কোন ব্যক্তি ‘ওয়াযি’[১] বলে। ফিকহী পরিভাষায় ওযু হলো; ইসলামের নির্দেশনার ভিত্তিতে মুখমন্ডল ও হাতদ্বয়কে ধৌত করা এবং মাথা ও পাদ্বয় মাসাহ করা। একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অর্জন হলো ওযুর অন্যতম কারণ ও দর্শন, এ কারণে এর নামকরণ ওযু করা হয়েছে।[২] | |||
কুরআনে ওযুর বিধান | |||
সূরা মায়িদাহ’র ৬নং আয়াতে ওযুর পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে: | |||
یا أَیهَا الَّذِینَ آمَنُوا إِذا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَکمْ وَ أَیدِیکمْ إِلَى الْمَرافِقِ وَ امْسَحُوا بِرُؤُسِکمْ وَ أَرْجُلَکمْ إِلَى الْکعْبَینِ ... | |||
ওহে যারা ঈমান এনেছ! যখন তোমরা নামাযে দাঁড়াও তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত তোমাদের হাত ধোও, আর তোমাদের মাথা ও গোড়ালি পর্যন্ত তোমাদের পা মাসাহ্ করো। | |||
এই আয়াতে দু’টি বাক্যের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত আকারে ওযুর বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে যে, ওযু দু’টি ধোয়া এবং দু’টি মাসাহ নিয়ে গঠিত: | |||
((فَاغْسِلُوا وُجُوهَکمْ وَ أَیدِیکمْ إِلَى الْمَرافِقِ)) তোমাদের মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত তোমাদের হাত ধোও। | |||
((وَ امْسَحُوا بِرُؤُسِکمْ وَ أَرْجُلَکمْ إِلَى الْکعْبَینِ)) আর তোমাদের মাথা ও গোড়ালি পর্যন্ত তোমাদের পা মাসাহ করো। | |||
((المرافق)) বলতে এখানে হাত কতদূর ধুতে হবে সেই সীমানা বর্ণনা করা হচ্ছে; এর মাধ্যমে ধোয়ার শুরু বা শেষের স্থান বর্ণনা করা হয় নি; এখানে বলা হচ্ছে কাঁধ ও বাহু ব্যতীত (কনুই পর্যন্ত) হাত ধৌত করা উচিত। | |||
আহলে সুন্নতের ভাষ্য হলো, কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করা ওয়াজিব, সেটা যেভাবেই ধোয়া হোক না কেন তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে উত্তম হলো আঙ্গুলের মাথা থেকে কনুই অবধি ধৌত করা।[৩] | |||
কিন্তু শিয়াদের ভাষ্য হলো, হাত ধোয়া কোথা থেকে শুরু করা হবে আঙ্গুলের মাথা থেকে নাকি কনুই থেকে, এ শিক্ষা আমরা সুন্নত থেকে গ্রহণ করবো।[৪] আর মাসুমগণ (আ.) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে ধোয়া কনুই থেকে শুরু করতে হবে।[৫] | |||
এছাড়া শিয়াদের দৃষ্টিতে ডান হাত বাম হাতের আগে ধৌত করা ওয়াজিব। কিন্তু আহলে সুন্নতের মতে বাম হাত আগে ধৌত করাতে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু ডান হাত আগে ধোয়া উত্তম।[৬] | |||
মাথা মাসাহ করা প্রসঙ্গেও শিয়া ও সুন্নি এবং আহলে সুন্নাতের অন্যান্য মাযহাবের মাঝে এখতেলাফ রয়েছে।[৭] | |||
আর একটি বিষয়ে পড় পার্থক্য রয়েছে তা হলো পা মাসাহ প্রসঙ্গে; এ ক্ষেত্রে শিয়াদের মত হলো পা মাসাহ করতে হবে কিন্তু আহলে সুন্নত মনে করে পা ধুতে হবে।[৮] | |||
শিয়া মাযহাবে ওযুর পদ্ধতি | |||
শিয়া মাযহাবে ওযুর পদ্ধতি হলো এমন: | |||
মুখমন্ডল ধৌত করা: যেখান থেকে চুল গজানো শুরু হয়েছে সেখান থেকে থুতনির শেষাংশ পর্যন্ত উপর থেকে নীচের দিকে দৈর্ঘে এবং প্রস্থে বৃদ্ধাঙ্গুল থেকে মধ্যমা এই পরিমাণে মুখমন্ডলের যতটুকু আসে। | |||
ডান হাত ধৌত করা: কনুই থেকে শুরু করে আঙ্গুলের মাথা অব্দি (উপর থেকে নীচের দিকে)। | |||
বাম হাত ধৌত করা: কনুই থেকে শুরু করে আঙ্গুলের মাথা অব্দি (উপর থেকে নীচের দিকে)। | |||
মাথা মাসাহ করা: কপালের উপরে অবস্থিত মাথার সামনের অংশে মাসাহ করতে হবে। | |||
ডান পা মাসাহ করা: পায়ের পাতার উপর আঙ্গুল থেকে উঁচু হয়ে ওঠা স্থান পর্যন্ত। | |||
বাম পা মাসাহ করা: পায়ের পাতার উপর আঙ্গুল থেকে উঁচু হয়ে ওঠা স্থান পর্যন্ত।[৯] | |||
হাদীসে ওযু | |||
আলী ইবনে মুসা আর-রেযা (আ.) বলেছেন: যে মহান আল্লাহর ইবাদতের জন্য দাঁড়ায় তার উচিত নিজেকে অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করা, অলসতা থেকে দূরে থাকা এবং ওযুর মাধ্যমে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর সাথে কথা বলার জন্য পবিত্রতা অর্জন করা ও প্রস্তুত হওয়া।[১০] | |||
মহানবি (স.) বলেছেন: ((الدّعاء مفتاح الرّحمة والوضوء مفتاح الصّلاة والصّلاة مفتاح الجنّة)) দোয়া হলো রহমতের চাবিকাঠি, ওযু নামাযের চাবিকাঠি আর নামায হলো বেহেশতের চাবি।[১১] | |||
মহানবি (স.) বলেছেন: ((الوضوء قبل الطّعام ینفی الفقر و بعده ینفی اللّمم و یصحّح البصر)) খাদ্য গ্রহণের আগে ওযু করা অভাবকে দূরে ঠেলে দেয় এবং খাদ্য গ্রহণের পরে ওযু করা ওয়াসওয়াসাকে দূর করে ও চোখের জ্যোতি বাড়ায়।[১২] | |||
আল্লাহর রাসূল (স.) কে জিজ্ঞেস করা হলো, আমি চাই আমার রুজি বৃদ্ধি পাক (এ জন্য আমার করণীয় কি), তিনি (স.) বললেন: ((دُم عَلَی الطَّهارَةِ یُوَسَّعُ عَلَیکَ فِی الرِّزقِ)) সর্বক্ষণ ওযু অবস্থায় থাকো তোমার রুযি বৃদ্ধি পাবে।[১৩] | |||
ওযুর আদব | |||
ওযুর পূর্বে মিসওয়াক করা উত্তম। কিবলা মুখি অবস্থায় ওযু করা। মাসুমগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘সর্বোত্তম উপবেশন হলো যখন তুমি কিবলা মুখি থাকবে’। ওযুর পানির দিকে তাকানোর সময় বলতে হবে, ((الحمدُللّه الذی جعل الماءَ طَهورا، ولَم یَجْعَلْهُ نجسا)) প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি পানিকে পবিত্র ও পবিত্রতা দানকারী রূপে বানিয়েছেন এবং এটাকে নাপাক ও অপবিত্র বানান নি। ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.) বলেছেন: ‘যখনই ওযুর উদ্দেশ্যে পানিতে হাত দেবে তখন বলো: ((بسم اللّه و باللّه، اللهمَّ اجْعَلْنی من التَّوابینَ، وَاجعلنی مِنَ المُتطهرینَ)) ‘আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর সাহায্যে, হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রদের অন্তর্ভূক্ত করো’। | |||
ওযুর পূর্বে তিনবার কুলি করা এবং ৩ বার নাকে পানি দেওয়া। | |||
আর মুখমন্ডল ধৌত করার সময়ও ‘বিসমিল্লাহ’ বলা। পানি ঢালার পর হাত দিয়ে ধৌত করার পুরো অংশে পানি পৌঁছে দেয়া। | |||
ওযুর সময় চোখ খোলা রাখা। মহানবি (স.) বলেছেন: ‘ওযুর সময় চোখ খোলা রাখো যাতে চোখ জাহান্নামের আগুন না দেখে।’ অর্থাৎ ওযুর সময় চোখ খোলা রাখলে তা জাহান্নামের আগুন না দেখার কারণ হয়।[১৪] |